মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২৪ অপরাহ্ন
বান্দরবান প্রতিনিধি:: পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ (হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন-১৯০০) পুনর্বহাল চায় হেডম্যান ও কার্বারীরা। তাঁরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও প্রথার মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা শাসিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। এখানকার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, জীবনাচার, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম তিনটি সার্কেল চিফ (রাজা), হেডম্যান-কার্বারী দ্বারা প্রথা অনুযায়ী চলে আসছে। কিন্তু এই ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে নতুন কোনো বিধি বা আইন এখানকার মানুষ মেনে নেবে না।
বান্দরবানের মৌজা প্রধান (হেডম্যান) ও পাড়া প্রধান (কার্বারী) কল্যাণ পরিষদ নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বুধবার সকালে পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ পুনর্বহালের দাবিতে জেলা প্রশাসকে দেয়া স্মারকলিপি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা নেতৃবৃন্দরা বলেন।
সকাল ১১টার দিকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির কাছে হেডম্যান-কার্বারী কল্যাণ পরিষদ নেতৃবৃন্দ একটি স্মারকলিপি দেন।
এসময় হেডম্যান-কার্বারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হ্লাথুহ্রী মারমাসহ হেডম্যান-কার্বারী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনটি পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠিসমূহকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ এদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সনাতনী রীতি-প্রথাসমূহ সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০০৩ সালে তৎকালীন সাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতাসীনকালে বিজ্ঞ হাইকোর্টে আইনটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আপীল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায়কে খারিজ করে পুনরায় ১৯০০ সালের রেগুলেশন (বিধি)কে বৈধ ও কার্যকর ঘোষণা করে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মধ্যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে সংকটে পড়ার সংশয় দেখা দেয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ২০০৩ সালে ‘মৃত’ ঘোষিত আইনটি ২০১৭ সালে বহাল হলেও সম্প্রতি আইনটি আবারও আপীল বিভাগে পুনর্বিবেচনা/পুনপর্যালোচনা (রিভিউ) এর জন্য আত্থাপিত হয়। এতে করে আইনটি বাতিল/মৃত হতে পারে এমন শঙ্কায় পড়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠি (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি)ও লোকজন। তাই পাহাড়ি জনগোষ্ঠিসমূহের বিশেষ সুযোগ-সুবিধাসহ এদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রথাসমূহ সংরক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন-১৯০০ আইনটি বলবৎ রাখতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়।
বান্দরবানের বোমাং সার্কেল সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলার ৯৫টি মৌজা ও রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৯ ও রাজস্থলী উপজেলার ৫টিসহ মোট ১০৯টি মৌজা নিয়ে বোমাং সার্কেল গঠিত। বোমাং সার্কেল চিফ বা রাজা স্থানীয় বাসিন্দা (নাগরিকত্ব) সনদ প্রদান করেন। তবে জেলা প্রশাসকগণও হেডম্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী সার্কেলের বাসিন্দাদের নাগরিক সনদ দিয়ে থাকেন।
হেডম্যান-কার্বারীগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধি (রেগুলেশন-১৯০০) অনুসারে প্রথামাফিক স্থানীয় সালিশ ও বিচার করে। এতে করে বান্দরবানের থানায় মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা কম। প্রথা অনুযায়ী পাহাড়ি জনগোষ্ঠি হেডম্যান-কার্বারীদের খুবই মান্য করেন এবং তাঁদের সালিশ ও নির্দেশনা মেনে চলেন। এটি একটি ঐতিহ্য, তাই ঐতিহ্যকে রক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ পুনর্বাহল রাখা সময়ের দাবি বলে নেতৃবৃন্দ জানান।